আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য শ্রী চিত্তরঞ্জন দেববর্মাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করেছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি শ্রীমতী দ্রৌপদী মুর্মু । আজ রাষ্ট্রপতি ভবনে আয়োজিত নাগরিক বিভূষণ অনুষ্ঠানে তাঁকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়। শ্রী চিত্তরঞ্জন দেববর্মার জীবন ও কর্ম সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দেওয়া হলো- শ্রী চিত্তরঞ্জন দেববর্মা বর্তমানে ত্রিপুরার গোমতী জেলার শান্তিকালিপীঠ ও আশ্রমের পীঠাধিশ। শ্রী দেববর্মা ১৯৬২ সালের ২২ জানুয়ারি সিধাই মোহনপুরের বড়কাঁঠালে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই শিবপার্বতী ও রাধাকৃষ্ণের প্রতি তাঁর গভীর ভক্তি গড়ে ওঠে। ম্যাট্রিক পাস করার পর, শ্রী দেববর্মা একজন পঞ্চায়েত সচিব হন এবং ভ্রমণকালে শ্রী শ্রী শান্তিকালি মহারাজের শিক্ষার সান্নিধ্যে আসেন। তখন তিনি গুরুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হন এবং সন্ন্যাসকে আলিঙ্গন করে গুরুর তত্ত্বাবধানে মা ত্রিপুরাসুন্দরীর উদ্দেশ্যে নিজেকে উৎসর্গ করেন। এনএলএফটি সন্ত্রাসবাদীদের হাতে তাঁর গুরু শ্রী শ্রী শান্তিকালি মহারাজের মৃত্যু তাঁর জন্য একটি সন্ধিক্ষণ হিসাবে চিহ্নিত হয়েছিল। গুরু কর্তৃক শ্রী শ্রী শান্তিকালী আশ্রমের নেতৃত্ব প্রদানের দায়িত্ব পেয়েই তিনি আদিবাসী দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সেবার জন্য মিশনকে প্রসারিত করেছিলেন। হুমকির মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও তিনি অমরপুর, বড়কাঁঠাল, চাচু, কোয়াইফাং এবং বোড়াখায় হোস্টেল খোলেন, অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত পরিবারের ৭০০ জনেরও বেশি শিশুর জন্য আশ্রয় ও শিক্ষার ব্যবস্থা করেন। শ্রী দেববর্মা ২০১৯ সালে শ্রী শ্রী শান্তিকালি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্রতিষ্ঠা করে সামগ্রিক ও মূল্যবোধ-ভিত্তিক শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিয়ে তাঁর গুরুর উত্তরাধিকারকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যান৷ ত্রিপুরা জুড়ে ২৪টি আশ্রম, একটি বৃদ্ধাশ্রম এবং মেন্টরশিপ প্রোগ্রামের মাধ্যমে তাঁর সামাজিক প্রভাব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। শিক্ষা ক্ষেত্রে তাঁর অক্লান্ত প্রচেষ্টা, বিশেষত জনজাতি প্রধান অঞ্চলে আধ্যাত্মিক ও নৈতিক কল্যাণে তাঁর গভীর প্রভাব একটি পুনর্জাগরণের জন্ম দিয়েছে। তাঁর প্রভাব আদিবাসী এবং অ-আদিবাসী উভয় সম্প্রদায় জুড়ে বিস্তৃত, যা অনুগামীদের সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি করে ধর্ম জাগরণে উৎসাহিত করছে। তিনি শ্রদ্ধেয় গুরুর শিক্ষার সাথে একত্রিতভূত হয়ে, জাঁকজমকপূর্ণ সংস্কৃতি, সনাতন ধর্ম অনুশীলন এবং এই অঞ্চলের সমৃদ্ধ ইতিহাসের উপর জোর দিয়েছেন এবং শুধুমাত্র একটি আশ্রমে আবদ্ধ থাকার বিষয় প্রত্যাখ্যান করেছেন। তাঁর স্থির বিশ্বাস সনাতন ধর্মের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও নীতিসমূহ জনগণের মধ্যে প্রতিষ্ঠা ও স্থায়ী করতে হলে তাকে ক্রমাগত সর্বসমক্ষে তুলে ধরাটাই সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষা এবং আধ্যাত্মিক দিকনির্দেশনার প্রতি শ্রী দেববর্মার অঙ্গীকার অনুরণিত হয়েছে, যা আদিবাসী এবং অ- আদিবাসী উভয় সম্প্রদায়ের অনুগামীদের আকর্ষণ করেছে। এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অবিচ্ছিন্ন অনুস্মারকে বিশ্বাস করে, তিনি বিভিন্ন আশ্রমে একটি গতিশীল উপস্থিতি প্রতিষ্ঠা ও লালন করেছিলেন। শিক্ষাগত এবং আধ্যাত্মিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি, আশ্রমের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবায় উদ্যোগী হয়েছেন, বিভিন্ন রোগের গ্যারান্টিযুক্ত চিকিৎসা প্রদানের জন্য ঐতিহ্যবাহী এবং ভেষজ পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন, যার ফলে অসংখ্য ব্যক্তি, যারা একসময় প্রচলিত চিকিৎসা দ্বারা নিজেদের দূরারোগ্য ব্যাধিকে অনিরাময়যোগ্য বলে মনে করতেন, আশ্রমের সামগ্রিক স্বাস্থ্যসেবা অনুশীলনের মাধ্যমে তাঁরা শান্তি এবং নিরাময় খুঁজে পেয়েছেন। তাঁর জীবন কাহিনী শিক্ষা, আধ্যাত্মিক এবং সম্প্রদায়ের কল্যাণের প্রতি তাঁর অবিচল উৎসর্গের একটি নিদর্শন, যা তাঁর শ্রদ্ধেয় গুরুর প্রবর্তিত নীতিগুলিকে মূর্ত করে তুলেছে। শ্রী দেববর্মা ২০১৮ সালে সন্ত ঈশ্বর ফাউন্ডেশন কর্তৃক সন্ত ঈশ্বর পুরস্কারের মতো বেশ কয়েকটি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন; ২০২০ সালে পূর্বোত্তর জনজাতি শিক্ষা সমিতি কর্তৃক কৃষ্ণচন্দ্র গান্ধী পুরস্কার; ২০২১ সালে মাই হোম ইন্ডিয়া কর্তৃক কর্মযোগী পুরস্কার এবং ২০২২ সালে ত্রিপুরা সরকার কর্তৃক মহারাজা বীর বিক্রম মানিক্য স্মৃতি পুরস্কার পেয়েছিলেন।