This news has no attached video clip.

কথা বলেন মাত্র ৭ জন! বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় এই মাতৃভাষা

Thursday, February 22, 2024
Total Views: 158

অনুভূতি ব্যক্ত করার মাধ্যম হল ভাষা। আর মায়ের পেট থেকে জন্ম নেওয়ার পর ধীরে ধীরে শিশুর মুখে যখন প্রথম বুলি ফোটে, যে ভাষায় সে প্রথম কথা বলতে শেখে, সেটিই তার মাতৃভাষা। এ পৃথিবীতে অজস্র, অসংখ্য ভাষা রয়েছে। প্রতিটি ভাষায় কথা বলার মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। তবে জানেন কি, এমন এক ভাষা রয়েছে যাতে কথা বলেন মাত্র সাতজন। বিশ্বের অন্যতম একটি ভাষা রেংমিটচ্য। এটি কোনও উপভাষা নয়, একেবারই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের একটি পূর্ণাঙ্গ ভাষা। এই ভাষার আলাদা শব্দ, বাণী এমনকী ছন্দও রয়েছে। রেংমিটচ্য ভাষা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম ও মায়ানমারের একটি ভাষা। কিন্তু, অবহেলার কারণে এই রংমিটচ্য ভাষা কার্যত বিলুপ্তির পথে। এই ভাষাটি বান্দরবানের ম্রো জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা হিসেবেই পরিচিত। তবে আশ্চর্যের বিষয়, এই ভাষায় কথা বলেন এমন জীবিত ব্যক্তির সংখ্যা মাত্র সাত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রক্কালে আলীকদমে কয়েকটি পাড়ায় শতাধিক রেংমিটচ্যভাষী পরিবার ছিল। ফের নতুন করে সেই অলীকদমেই শুরু হয়েছে বিলুপ্তপ্রায় এই ভাষার শিক্ষা কার্যক্রম। ম্রো অক্ষরের সাহায্যে শিশুদের অমর একুশের গান শেখাচ্ছে পঞ্চম শ্রেণী পাস এক ম্রো যুবক। অলীকদমে দুর্গম পাহাড়ের ভাঁজে ক্রাংসিপাড়াতে ম্রো জনগোষ্ঠীর মানুষজন বসবাস করে। সূর্যোদয়ের পর নিজেদের তৈরি বাদ্যযন্ত্র প্লুংয়ের সুরে তাদের দিন শুরু হয়। রংমিটচ্য ভাষা জানা সাতজনের মধ্যে অন্যতম সত্তরোর্ধ্ব কুনরাও ম্রো। তাঁর প্রতিবেশি মাংপুং ম্রোর সঙ্গে নাগাড়ে মাতৃভাষায় কথা বলেন এই বৃদ্ধ। কুনরাও ম্রোয়ের কথায়, 'আমি রেংমিটচ্য ভাষা জানি। এখন আর কেউ এই ভাষায় কথা বলে না।' এই ভাষায় কথা বলেন বান্দরবানের অলীকদমের তৈনফা গ্রামের হেডম্যান রেংপুং ম্রোও। নাতিদের সঙ্গে তাঁকে মাতৃভাষাতেই আদুরে কথা বলতে শোনা যায়। তবে পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে এই ভাষার কোনও চল নেই বলেই আক্ষেপ বৃদ্ধের। ম্রো জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে মাত্র সাতজন নিজেদের মাতৃভাষাটা জানেন এবং সেই ভাষাতেই কথা বলেন। রেংপুং ম্রো বলেন, 'এখন আর কিছুই প্রায় অবশিষ্ট নেই। সবটাই শেষ হতে বসেছে। আমি মগ ভাষা জানি। ত্রিপুর এবং বাংলা ভাষাও জানি। তবে কোনওটাই লিখতে পারি না।' এই ক্রাংসিপাড়া এলাকায় একটি ম্রো জনগোষ্ঠীর স্কুল রয়েছে। সেখানে শিশুদের রেংমিটচ্য ভাষায় পাঠ শেখানো হচ্ছে। তাদের সমবেত কণ্ঠে শোনা যায়, 'কা ই থি মলিং প্লত, কা ই তোমা নং ওয়েত।' অর্থাৎ আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো ২১ ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভবুলতে পারি।' পঞ্চম শ্রেণী পাশ যুবকই শিশুদের নিজের মাতৃভাষায় পড়াশোনা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। সেই একমাত্র রেংমিটচ্য ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস করে যাচ্ছে নিরন্তর। রেংমিটচ্য ভাষার আস্ত একটি স্কুলও নির্মিত হয়েছে এই এলাকায়। যা মাতৃভাষা রক্ষার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা বলেই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। এ প্রসঙ্গে মাতৃভাষায় কথা বলা সিংরা ম্রো বলেন, 'আমি চাই যতদিন বেঁচে থাকব, ততটা রেংমিটচ্য পড়াই। বয়স্ক হোক বা শিশু, সকলকে এ ভাষা শেখাতে চাই।' ম্রো অক্ষর দিয়ে ইতিমধ্যেই তৈরি করে ফেলা হয়েছে রেংমিটচ্য অভিধানও। যেখানে রয়েছে কৃষি, সংস্কৃতি, ধর্ম, খাবার এবং দৈন্যন্দিন জীবনে ব্যবহৃত রেংমিটচ্য ভাষার শব্দগুলি। এই ভাষার গবেষক ইয়াংঙান ম্রো বলেন, 'ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে খুব একটা চাপ না থাকলেও এপ্রিল থেকে অনলাইনে ভার্চুয়াল ক্লাসে এই ভাষা শেখানোর কাজ করি। আমরা চেষ্টা করব প্রতি বছর অন্তত তিন থেকে চারমাস এই ভাষা শেখানোর।' উল্লেখ্য, বিশ্বে ছয় হাজারেরও বেশি ভাষা রয়েছে। তার মধ্যে কমপক্ষে ৪৩ ভাগ বিলুপ্তির পথে। কোনও ভাষা বিলুপ্তির পথে চলে গেলে সেই ভাষার ঐতিহ্য এবং ব্যবহারিক প্রয়োগ কমে যেতে শুরু করে। ২০৩২ সাল পর্যন্ত সময়কে ভাষা সংরক্ষণের দশক ঘোষণা করে রাষ্ট্রসংঘ ভাষা বাঁচানোর উদ্যোগ গড়েছে। এবার দেখার মাত্র সাতজন মানুষের মাতৃভাষা রেংমিটচ্যকে এই উদ্যোগ বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে কি না।













































© Copyright, 2022. Tripura Prottoy, India. All Rights Reserved. Developed and Maintained by Chevichef Private Limited.

Images published in the Image Gallery are subjected to Copyright of the photographer under The Copyright Act, 1957 of the Republic of India. Any unauthorized use of any image is prohibited.