"ওরে কুশীলভ করিস কি-রে গৌরব, বাঁধা না দিলে কি বাঁধতে পারিস?---(শ্রী মৎ স্বামী ভূতেশানন্দ মহারাজ) ঠাকুরের অন্তরঙ্গ ত্যাগি পার্ষদ স্বামী তুরিয়ানন্দ খুব বেদান্ত চর্চা করতেন।তিনি নিষ্ঠাবান ব্রাহ্মণ সন্তান।ত্রিসন্ধ্যা জপ ধ্যান গঙ্গাস্নান এবং বেদান্ত বিচারে তাঁর সমস্ত দিন চলে যেত।নিজের সাধনে তিনি এতই একাগ্র ছিলেন যে,শ্রীরামকৃষ্ণের কাছে যাওয়ার সময় হতো না।অনেকদিন তাঁকে না দেখে ঠাকুর জিজ্ঞাসা করলেন হরি কেন আসছে না?তাঁর অন্য সন্তানেরা বললেন,তিনি এখন সাধনে খুব ব্যস্ত,তাই তাঁর আসার সময় হয় না।ঠাকুর শুনে চুপ করে রইলেন। একদিন ঠাকুর বাগবাজারে বলরাম বসুর বাড়িতে এসেছেন। বলরাম বাবুর বাড়ি ছিল ঠাকুরের কলকাতার বৈঠকখানা।তিনি কলকাতায় এলে ভক্তমণ্ডলী সেখানে জড়ো হয়ে তাঁকে দর্শন করতেন।সেখানে পৌঁছে ঠাকুর হরি মহারাজকে খবর দিতে বললেন।কাছেই ছিল তাঁর বাড়ি।আহ্বান পেয়ে হরি মহারাজ যখন ঠাকুরের কাছে এলেন তখন দোতলার হল ঘরে ভক্ত-পরিবৃত হয়ে ঠাকুর তাঁর মধুর কন্ঠে একটি গান গাইছেন।চোখের জলে তাঁর বুক ভেসে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়, যে-কার্পেটের উপর তিনি বসে আছেন তারও খানিকটা চোখের জলে ভিজিয়ে গিয়াছে।গানটি সাধারণ যাত্রা দলের,কিন্ত দলের গায়করা তো শ্রীরামকৃষ্ণের মতো হৃদয দিয়ে গান করতে পারে না।গানের বিষয় বস্ত--অশ্বমেধের ঘোড়া নিয়ে লবকুশের সঙ্গে শ্রী রামচন্দ্রের যুদ্ধ। রামচন্দ্রের সৈন্যরা লব কুশের কাছ থেকে ঘোড়া উদ্ধারের জন্য যুদ্ধ করছে।হনুমান বোধহয় অগ্রনী ছিলেন। সৈন্যরা পরাস্ত হলে লবকুশ হনুমানকে বেঁধে মায়ের কাছে নিয়ে গিয়ে বলছেনঃ মা কত বড় একটা হনুমানকে বেঁধে নিয়ে এসেছি!হনুমান তখন গান গেয়ে বলছেনঃ ওরে কুশীলভ করিস কি-রে গৌরব, ধরা না দিলে কি পারিস ধরিতে? ঠাকুর এই গানটি গাইছেন আর দুচোখে তাঁর অশ্রুধারা বইছে।হরি মহারাজ দূর থেকে এই দৃশ্য দেখলেন।তাঁর চোখ দিয়েও অশ্রুধারা বইতে আরম্ভ করল।তিনি বুঝলেন যে,এই গান তাঁকেই উদ্দেশ্য করে।হরি মহারাজকে এই শিক্ষা দেওয়ার জন্যই ঠাকুর আজ তাঁকে ডেকে এনেছেন। আর কিছু বলতে হলো না।তিনি বুঝলেন, স্বেচ্ছায় ধরা না দিলে সাধন করে কে তাঁকে ধরতে পারবে?সাধনের এই অভিমান বৃথা।এটি বুঝতে পেরে অভিমান বিসর্জন দিয়ে শ্রী গুরুর চরণে আবার নতুন করে তিনি আর্তসমর্পন করলেন। --(জয় মা জয় ঠাকুর জয় স্বামীজী)