This news has no attached video clip.

জাঠ ভোটেই জগদীপ! ধাঁধার নাম ধনখড়

Wednesday, July 20, 2022
Total Views: 533

বিবস্বান বসু রাইসিনা হিলসের ভবিষ্যৎ বাসিন্দা কে হবেন, তা নির্বাচনের ঠিক দু’দিন আগে শনিবাসরীয় সন্ধেয় আম দেশবাসীর জন্য আরও একটি বড়সড় চমক উপহার দিল বিজেপি৷ দলের সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা ঘোষণা করলেন, আসন্ন উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এনডিএর প্রার্থী ‘কিষানপুত্র’ জগদীপ ধনখড়৷ প্রান্তিক আদিবাসী সমাজের মন পেতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জনজাতি সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে দ্রৌপদী মুর্মুকে তুলে ধরা নিঃসন্দেহে পদ্ম শিবিরের মাস্টারস্ট্রোক৷ বিশেষত সংখ্যাতত্ত্বের বিশ্লেষণে৷ সেদিক থেকে দেখলে, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যেখানে সংসদের দুই কক্ষের সদস্যদেরই কেবল ভোটাধিকার রয়েছে এবং সেই অঙ্কে এনডিএর প্রার্থীর জয়লাভ নেহাতই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র, সেখানে জগদীপ ধনখড়ের মনোনয়ন কোন বিচারে গভীর কৌশলের বার্তা বহন করে, তা আতসকাচের তলায় ফেলে কাঁটাছেড়া করার যথার্থ দাবিই রাখে৷ আর এখানেই দ্রৌপদীকে চয়নের চেয়ে অনেক বেশি চমকে দেওয়ার মতো ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের সদ্যপ্রাক্তন রাজ্যপালের উত্তরণ৷ Advertisement ধনখড়ের নাম উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে ঘোষণা হওয়া ইস্তক চুলচেরা বিশ্লেষণ শুরু হয়ে গিয়েছে, কেন তাঁর নামে সিলমোহর দিল এনডিএ (NDA)? নেপথ্যে রয়েছে কোন গভীর অঙ্ক? সেটা করতে গিয়ে যে সম্ভাবনাটা সবচেয়ে জোরালো হয়ে উঠে এসেছে, তা হল কৃষক অসন্তোষে জল ঢালার লক্ষ্যেই ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে ধনখড়ের মতো একজন জাঠ ও একইসঙ্গে কৃষক সন্তানকে বেছে নেওয়া হয়েছে৷ চাপের মুখে কৃষি আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলেও, কৃষকের মন যে গলেনি, তা গত এক বছরে হওয়া দেশের উত্তরাংশের বিভিন্ন ভোটেই স্পষ্ট৷ যে জাঠ কৃষকের ভোট তাদের বড় ভরসা ছিল, তা আর বিজেপির ঝুলিতে নেই৷ এই অবস্থায় ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে আর ঝুঁকি না নিয়ে জাঠ ভোট নিশ্চিত করতে চাইছে গেরুয়া শিবির৷ কারণ, লোকসভার লড়াইয়ে রাজস্থান, হরিয়ানা, দিল্লি ও উত্তরপ্রদেশের বেশ কিছু আসনে যেমন জাঠ কৃষকরা নির্ণায়ক শক্তি হতে পারে, তেমনই দেশ দখলের যুদ্ধের আগে-পরেই রয়েছে রাজস্থান, হরিয়ানা ও দিল্লির বিধানসভা ভোট৷ আর তাই কৃষক আন্দোলনের ক্ষতে প্রলেপ দিতে খুঁজে পেতে বার করা জাঠ-তাস জগদীপ৷ কিন্তু, বিজেপি যাকে কৃষকপুত্র তকমা দিয়ে আস্তিন থেকে বার করেছে, সেই জগদীপ ধনখড় আদতে কৃষকের সন্তান হলেও, পরিচিতি লাভ করেছেন সংবিধান বিশারদ, বিশিষ্ট আইনজীবী এবং রাজনীতিবিদ হিসেবেই৷ অতএব যে পরিচয় সত্ত্বার রাজনীতির সঙ্গে জনভিত্তি নেই, কৃষকের লড়াইয়ের ঘাম-রক্ত-মাটি লেগে নেই, তিনি রাজস্থানি ভূমিপুত্র হলেও, তাকে নিজেদের লোক হিসেবে জাঠ কৃষকরা আদৌ গ্রহণ করবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ রয়েছে যথেষ্টই৷ সে জন্যই খটকাটা উড়িয়ে দেওয়ার নয় যে, কেবলই জাঠ ভোটব্যাংক ফিরে পাওয়ার লক্ষ্যে ধনখড়ের ওপর লগ্নি করলেন জেপি নাড্ডারা? রাজস্থান থেকে সাংসদ-বিধায়ক হলেও, ১৯৯০-এ চন্দ্রশেখর সরকারের সংসদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী হলেও, ২০১৯-এর অগস্টের আগে পশ্চিমবঙ্গের মানুষ যাঁর নামই জানতেন না, এখনও ভারতের ক’জন নাগরিক তাঁর নাম জানেন সন্দেহ, সেই ধনখড়কে উপরাষ্ট্রপতি পদে বেছে নেওয়ার পিছনে অন্য কোনও অঙ্ক নেই তো? নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর এনডিএ যেখানে ভৈরো সিং শেখাওয়াত ও বেঙ্কাইয়া নাইডুর মতো ওজনদার এবং আগমার্কা রাজনীতিককে উপরাষ্ট্রপতি করেছে, সেখানে কোন মাপকাঠিতে ধুন্ধুমার ফেলে দিলেন আপাত অপরিচিত ধনখড়? তবে কি সংবিধানের ওপর দখলই তাঁকে অ্যাডভান্টেজ দিল? কেননা, বিরোধীদের দাবি, রাষ্ট্রপতি পদে যেখানে দ্রৌপদীর মতো ‘পুতুল’কে পাঠাচ্ছে এনডিএ, সেখানে সাংবিধানিক কাঠামোয় ভারসাম্য রাখার জন্য উপরাষ্ট্রপতি পদে ধনখড়ের মতো একজন বেত্তাকে বেছে নিয়েছে তারা৷ আবার এমন বিরোধী ব্যাখ্যাও হাওয়ায় ভাসছে, রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি দুই পদেই দুর্বল ব্যক্তিত্বদের বসিয়ে পুরো সিস্টেমেই নিজেদের কবজা কায়েম করতে চাইছেন মোদী-শাহ৷ একথা বললে মোটেই সত্যের অপলাপ হবে না যে, ধনখড় এনডিএর উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী মনোনীত হওয়ায় সবচেয়ে বেশি স্বস্তি যদি কেউ পেয়ে থাকে, তা হলে সেটা তৃণমূল কংগ্রেস৷ কারণ, ধনখড় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল মনোনীত হয়ে আসা ইস্তক যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের সঙ্গে প্রায় প্রতি ইস্যুতে সংঘাতে জড়িয়ে ছিলেন তা কার্যত নজিরবিহীন৷ অতীতে ধর্মবীর বা বিডি পাণ্ডের মতো রাজ্যপালের সঙ্গে তৎকালীন রাজ্য সরকারের বা শাসক দলের ঠোকাঠুকি লেগেছে ঠিকই, কিন্তু গত তিন বছর ধরে যে লাগাতার দড়ি টানাটানির সাক্ষী বঙ্গবাসী থেকেছে, তা বাংলার রাজনীতিতে অনবরত উত্তেজনার উপাদান জুগিয়েছে৷ যাঁর গায়ে ‘পদ্মপাল’ তকমা, যাঁর বিরুদ্ধে রাজভবনকে বিজেপির রাজ্য দপ্তরে পরিণত করার অভিযোগ, সেই জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বা শাসক শিবিরের বারকয়েক সৌজন্য সাক্ষাৎ যে হয়নি তা নয়, কিন্তু তা নেহাতই সিন্ধুতে বিন্দুমাত্র৷ নরমে-গরমে চলা সম্পর্কে আগুনই বেশি, জল ছিটেফোঁটা৷ সেই প্রেক্ষিতেই এরাজ্যের শাসক দলের তরফে দাবি করা হচ্ছে, মোদী-শাহ-নাড্ডাদের কাছ থেকে লাগাতার তৃণমূল বিরোধিতারই পুরস্কার পেলেন ধনখড়৷ আবার যাঁরা মোদী-দিদির সেটিংয়ের তত্ত্বে বিশ্বাসী, তাঁদের দাবি, তৃণমূলকে স্বস্তি দিতেই ধনখড়কে রাজ্যপালের পদ থেকে সরিয়ে পাঠানো হল আরও বড় দায়িত্বে৷ এতে যেমন ধনখড়ও উপহার পেলেন, তেমনই সন্তুষ্ট করা গেল তৃণমূল নেত্রীকে৷ এপ্রসঙ্গ তাঁরা উল্লেখ করছেন দার্জিলিং রাজভবনের সাম্প্রতিক বৈঠকে, যেখানে জগদীপ ধনখড়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও হিমন্ত বিশ্বশর্মা৷ সরকারি ভাবে একে সৌজন্য সাক্ষাৎ বলা হলেও, সিপিএমের দাবি, মমতার সঙ্গে আলোচনা করেই ধনখড়কে উপরাষ্ট্রপতি মনোনীত করার জন্য অসমের মুখ্যমন্ত্রীকে দূত হিসেবে পাঠিয়েছিলেন মোদী-শাহ৷ যাই হোক, তাদের সেই দাবির সারবত্তা কতটা রয়েছে তা যেমন তর্কযোগ্য, তেমনই তর্কের অবকাশ রয়েছে ধনখড়ের মনোনয়নের নেপথ্য কারণ নিয়েও৷ শুধুই জাঠ ভোটের জন্য জগদীপকে বাছাই করা নাকি আড়ালে ডালপালা মেলেছে অন্য অঙ্ক, সেই ধাঁধা কিন্তু রয়েই গেল৷ পুনশ্চ: অনেকেই ভেবেছিলেন উপরাষ্ট্রপতি পদে মুখতার আব্বাস নাকভিকে মনোনয়ন দিতে পারে এনডিএ৷ বিশেষত, তাঁর রাজ্যসভার মেয়াদ ফুরিয়ে যাওয়ার পর তা নবীকরণ না-হওয়ায় জল্পনা মাথাচাড়া দিয়েছিল যে, নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তি তুলে ধরতে এই সংখ্যালঘু মুখকেই সম্ভবত বেঙ্কাইয়ার উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নেবে পদ্ম শিবির৷ কিন্তু ৮০-২০ ফর্মুলায় খোলাখুলি হিন্দুত্বের জিগির তুলে যারা ক্ষমতা দখলের ‘রাজধর্ম’ পালন করে, তাদের নিজেদের ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে তুলে ধরার দায় রয়েছে বলে যাঁরা মনে করছিলেন, তাঁদের বাস কেবলই মূর্খের স্বর্গে৷ (এই প্রবন্ধে প্রকাশিত মতামত সম্পূর্ণ ভাবে লেখকের ব্যক্তিগত। ত্রিপুরা প্রত্যয় ডিজিটাল কোনও ভাবেই লেখার দায়ভার বহন করে না।)













































© Copyright, 2022. Tripura Prottoy, India. All Rights Reserved. Developed and Maintained by Chevichef Private Limited.

Images published in the Image Gallery are subjected to Copyright of the photographer under The Copyright Act, 1957 of the Republic of India. Any unauthorized use of any image is prohibited.