This news has no attached video clip.

অগ্নিপথ: একটি রাজনৈতিক কর্মসংস্থানের নান্দীমুখ

Tuesday, July 19, 2022
Total Views: 522

ভূ-পরিসর দখল নেওয়া নয়, আধুনিক বিশ্বে ডিজিটাল ও তথ্যের দুনিয়ার ওপর দখল নেওয়াটাই আধিপত্যের মূল কথা। যেখানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ইন্টারনেট অফ থিঙ্কস ও মেটা দুনিয়াই হবে যুদ্ধের সম্ভার। সেই নিরিখে, রাষ্ট্রের তরফে প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সেনা নিয়োগের দায় ও দায়িত্বও দিনে দিনে কমে আসারই কথা। ফলে, প্রতিরক্ষা বাজেটে বেতন-পেনশনের পেছনে ব্যয় কমিয়ে আধুনিক প্রযুক্তিতে দর হয়ে ওঠাটাই এখনকার দস্তুর। সেটাই গৃহীত উপায়। আর এটার সেরা উপায়, সেনাবাহিনীতে নিয়োগ কমিয়ে আধুনিকতম প্রযুক্তিতে ব্যয় বাড়ানো- যা সাবেক গোয়েন্দাগিরির সঙ্গে ডিজিটাল গোয়েন্দাগিরিতে, সাইবার লুকোচুরিতে খরচ করা হবে। এর ফলেই যুদ্ধে সর্বোৎকৃষ্ট দক্ষতা এনে দিতে পারে একটা রাষ্ট্রকে। আর ডিজিটাল-ভক্ত প্রধানমন্ত্রী মোদী তো সেটা আরও গুছিয়ে করতে চান। করছেনও। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, আমাদের দেশে সেনাবাহিনীতে লোকবল কমানোর প্রশ্নটি জুড়ে আছে কর্মসংস্থানের প্রশ্নের সঙ্গে। বছরে ৫০ হাজার নিয়োগ হত সেনায়। গত ২ বছর করোনার কারণে সেই নিয়োগ বন্ধ ছিল। অন্যদিকে, বেসরকারিকরণের চাপে অন্যান্য সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগ ক্রমহ্রাসমাণ। ফলে সেনায় নিয়োগ নিয়ে নতুন কৌশল দেশের যুবসমাজের কাছে বড়ো ধরনের থ্রেট হয়ে গেছে। এই বিশাল কর্মক্ষম যুববাহিনীর প্রশ্ন তাই যথার্থ: এই যে সরকার নিয়োগের সব উপায়গুলোকে ধীরে ধীরে অবরুদ্ধ করে দিল, এবার আমরা যাব কোথায়? অগ্নিপথ প্রকল্পে নিয়োগ যদিও বা হয়, ৪ বছর পরে 'অগ্নিবীর' তকমা নিয়ে কি আমরা বাঁশিতে ফুঁ দেব? নিয়োগের যে ৭৫ শতাংশর ওপর কোপ পড়বে, তারা কারা হবে- এ নিয়ে ৪ বছর ধরে তাদের মনে থাকবে উদ্বেগ ও শঙ্কা, এমনকী, মানসিক অবসাদ। তারপর যারা বাতিলের দলে চিহ্নিত হবে, তারা এবার যাবে কোথায়? সরকারি ব্যবস্থা অনুযায়ী, ধরে নেওয়া যাক ১৮ বছর বয়সে যে তরুণ সেনায় নিয়োগপত্র পেল, ২২ বছরে পৌঁছে সে আবার কর্মহীন হয়ে গেল। পূর্ণকর্মক্ষম অবস্থায় কর্মহীন! তখন তো হাতে বাটি নিয়ে রাস্তায় গিয়ে বসতে হবে। মোদ্দা কথা, স্থায়ী কর্মসংস্থান হওয়ার ব্যবস্থাটি যে আর আগের মতো থাকছে না, সেনাবাহিনীতেও নিয়োগের সংখ্যাটা যে আরো আরো কমে আসছে- এই সত্যটি এখন দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। আর তা বুঝেই মরিয়া হয়ে দেশের যুব সমাজ এক সর্বাত্মক আন্দোলনে পথে নেমেছে। মুছে যাচ্ছে ধর্মের ভেদাভেদ, ভেঙে পড়ছে বিভেদ-হিংসার পাঁচিল। কৃষক আন্দোলনের পরে আরেকটা জনবাদী আন্দোলন আড়েদিঘে বাড়ছে। এমনিতেই প্রায়-সর্বত্র স্থায়ী চাকরির দরজা বন্ধ, রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বেচে দেওয়ার হাট বসেছে, মানুষের ক্ষোভ বাড়ছে। এই ক্ষোভ আঁচ করে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে ১৮ মাসে ১০ লাখ সরকারি চাকরি দেওয়ার ঘোষণাকেও যুবকরা ভরসা করছে না। এমনকী, এটাও অগ্নিপথ'এর মতোই ৪ বছরের চাকরি কিনা, কে জানে? সেনাবাহিনীতেও নিয়োগ-দরজা প্রায় বন্ধ হয়ে আসায় সাধারণ মানুষের ক্ষোভ-বিক্ষোভ যে আর কোনো বাধা মানবে না, তা তো স্বতঃসিদ্ধ ছিল। এখন বিপদে পড়ে সরকার কিছুটা মলম লাগাবার চেষ্টা করছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব ও সেনা প্রধানদের দিয়ে তাপ্পি দেওয়ার চেষ্টা করছে। চাকরিপ্রার্থীদের বয়সসীমা বাড়িয়ে, আধা-সামরিক বাহিনী ও অসম পুলিশ, প্রতিরক্ষামন্ত্রকের অধীনে বিভিন্ন বিভাগে, কোস্টাল গার্ডে ‘অগ্নিবীর’দের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করবার অঙ্গীকার করে। কিন্তু এসবই তো মুখের কথা। মানুষ তো জানে, কখন অমিত শাহ বলে দেবেন, 'এ সবই জুমলা'! তখন! তাই এই ক্ষোভ দমন করা খুব সহজ হবে বলে মনে হয় না। এদিকে, অগ্নিবীরদের নিয়ে বিজেপির আসল মতলবটা কি, তা বোঝা গেছে কৈলাস বিজয়বর্গীর কথাতেই। গত রবিবার মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর বিজেপির এই নেতা মন্তব্য করেন 'অগ্নিপথ প্রকল্প দেশের যুবসমাজের জন্য অনেক সম্ভাবনা তৈরি করবে। চার বছর পর তাদের হাতে ১১ লাখ টাকা থাকবে। অগ্নিবীর তকমা থাকবে।' তারপরেই তিনি যা বলেছেন তাতেই ঝোলা থেকে বেড়াল বেরিয়ে পড়েছে। কৈলাসের সংযোজন, 'অনেক কাজ করতে পারবেন। আমাকে যদি এই দফতরে, বিজেপির দফতরে নিরাপত্তারক্ষী রাখতে হয় তা'হলে আমি অগ্নিবীরদের অগ্রাধিকার দেব।' এবারই আসা যাক, অগ্নিপথ প্রকল্পের মূল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যটি নিয়ে আলোচনায়। অগ্নিপথ প্রকল্প হচ্ছে আরএসএস ও বিজেপির জন্য একটি বৈধ আধা সেনাবাহিনী তৈরির প্রকল্প। এতদিন আরএসএসের স্বয়ংসেবকরা হাফ প্যান্ট পরে লাঠি আর তরবারি নিয়ে অনুশীলন করেছেন এখন এই প্রকল্পের কল্যাণে আমাদের মতো সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের পয়সায় বিভিন্ন আগ্নেয়াস্ত্রের ট্রেনিংটাও সারা হয়ে যাবে উপরন্তু তাঁরা একটি রাষ্ট্রীয় শিরোপা পাবেন অগ্নিবীর আর হাতে কড়কড়ে ১১ লাখ টাকা। হিটলার ঠিক এই কাজটিই করেছিল Saal Schutz সংক্ষেপে SS বাহিনী দিয়ে। এরাও শুরু করেছিল, প্রথমে বিভিন্ন হলের নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে পরে জার্মান সেনাবাহিনীর কাছে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ নিয়েছিল। হিটলার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নানান চোরাগলি কাজে লাগিয়ে, খুন-জখম চালিয়ে, রাইখস্টাগ বা পার্লামেন্ট পোড়ানো দিয়ে ক্ষমতায় এসে ১০ বছরে মিলিটারাইজেশনের প্রোগ্রাম নেয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মান সেনাবাহিনীর বহর ১ লাখের বেশি হবে না এই আন্তর্জাতিক চুক্তি হয়েছিল। তাকে পাত্তা না দিয়ে ঘুরপথে হিটলার জার্মান বাহিনীকে বাড়ানো শুরু করে। সেখানেই জার্মানরা স্বেচ্ছায় যোগদান করতে পারে অথবা তাদের নিয়োগ করা হতে পারে, অস্থায়ী ভাবে। খাঁটি জার্মানরা এ বাহিনীতে ঠাঁই পেল। ভেহ্মাখট এই একত্রিত নাজি বাহিনীর নতুন নাম হল। এদের ২টি শাখা ছিল Allgemeine SS বা জেনারেল এসএস আর Waffen SS বা সশস্ত্র এসএস। এই ২ শাখার সব সদস্যই নাৎসি দলের সদস্য। হিটলার দেশের ভিতরে ও বাইরে বিরুদ্ধমতকে ঠান্ডা করতে এই দুই বাহিনীকে ব্যবহার করত। Allgemeine SS কে লাগানো হত ধর্মীয় ও জাতিগত হিংসা ও পীড়ন চালানোর জন্য অন্যদিকে, Waffen SS-কে ব্যবহার করা হত রাজনৈতিকভাবে যারা বিরুদ্ধপক্ষ ও অবাধ্য জনতাকে নিকেশ করতে। এই SS বাহিনী পরিচালনার দায়িত্বে ছিল হেনরিক হিমলার, যে আবার সেনাবাহিনীর কর্তা ছিল। তারপরের ইতিহাস আমাদের সবারই জানা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে ইহুদি হত্যার বিস্তৃত প্রকল্প। মনে করার বিষয়, ১০ বছরের এই মিলিটারাইজেশন প্রকল্প ৪ বছরে এগিয়ে এনেছিল হিটলার। ৪ বছরে মগজধোলাই করা সহজ। টাকা দিলে আরোই সহজ। সেনাবাহিনীর শৃঙ্খলায় প্রশ্নহীন আনুগত্য চাই। সেই জন্য মস্তিষ্কপ্রক্ষালন যন্ত্রে ফেলে রাখতে হবে। অতএব সেখানে মাথায় গজাল মেরে অমুকরা খারাপ, দেশের সব সমস্যার জন্য তারাই দায়ী আর হিটলাররা দেশ ভোগে দিয়েও মহান, বোঝাতে আর সমস্যা কোথায়! বাহিনীতে থাকলেও জয় হিটলার, মারো ইহুদি করবে। না থাকতে পারলে আরো করবে। পকেটে টাকা আর আরো কামানোর আশা - দুই-ই বিদ্বেষের অন্যতম হাতিয়ার। গণতন্ত্রিক মোড়কে ক্ষমতায় এসে গণতন্ত্রের বুকে পা দিয়ে হিটলার এদের সশস্ত্র করেছিল, ফ্যাসিবাদ কায়েম করতে, জার্মান প্রভুত্ব প্রতিষ্ঠা করতে। ৪ বছর অনেকটা কাজে দিয়েছিল বই কি! আজ আমাদের দেশে 'অগ্নিপথ'এর ধ্বজা তুলে অস্থায়ীভাবে প্রায় সামরিকবাহিনী নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে। আগামীদিনের ইতিহাসের এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ পাতা। অলিখিত এই বইেয়র পাতা যারা এখনও পড়ে উঠতে পারছে না, তারা অগ্নিপথ কোন পথে বুঝে উঠতে পারবে না। ঠিক যেমন বোঝেনি একদা জার্মানির রাজনৈতিক দলগুলো এবং অনেক বিদগ্ধ মানুষও। (এই প্রবন্ধে প্রকাশিত মতামত সম্পূর্ণ ভাবে লেখকের ব্যক্তিগত। ত্রিপুরা প্রত্যয় ডিজিটাল কোনও ভাবেই লেখার দায়ভার বহন করে না।)













































© Copyright, 2022. Tripura Prottoy, India. All Rights Reserved. Developed and Maintained by Chevichef Private Limited.

Images published in the Image Gallery are subjected to Copyright of the photographer under The Copyright Act, 1957 of the Republic of India. Any unauthorized use of any image is prohibited.